প্রকৃত আহলে সুন্নাহ কে বা কারা?
মূলঃ ফাযীলাতুশ শায়খ হাফিয আবদুল্লাহ
(ভাগলপুর, বিহার, ভারত)
হানাফীঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ।
মুহাম্মাদীঃ ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকাতুহ।বলুন, কোথা থেকে এসেছেন?
হানাফীঃ এই শহর থেকেই।
মুহাম্মাদীঃ আপনি ভাগলপুরেই থাকেন?
হানাফীঃ জী, হ্যাঁ।
মুহাম্মাদীঃ প্রথমে কখনাে দেখিনি তাে?
হানাফীঃ আমি এই প্রথম, এর আগে কখনাে আপনাদের মাসজিদে আসিনি।
মুহাম্মাদীঃ তাে আজ কীভাবে আসলেন?
হানাফীঃ একটি বিষয় জানতে এসেছি।
মুহাম্মাদীঃ বলুন! আমি প্রস্তুত আছি।
হানাফীঃ শুনেছি যে, আহলুল হাদীস নামে একটি নতুন ফিরকার উদ্ভব হয়েছে, যারা সহাবী ও ইমামদের মানে না।
মুহাম্মাদীঃ ভাই, এসব বন্ধুদের প্রােপাগাণ্ডা বা ছলচাতুরী। সত্য কথা হল, আমরা কাউকে গাল-মন্দ করি না, বরং সম্মানিতদের সম্মান করি এবং মান্যবরদের মান্যতা দেই।
হানাফীঃ আপনি কি ইমামদের মানেন?
মুহাম্মাদীঃ কেন নয়? অবশ্যই।
হানাফীঃ লােকেরা বলে যে, আপনারা ইমাম মানেন না।
মুহাম্মাদীঃ খৃষ্টানরাও তাে বলে যে, মুসলিমরা ‘ঈসা 'আলায়হিস সালামকে মানে না। তাে আপনারা কি ‘ঈসা আলায়হিস সালামকে মানেন না?
হানাফীঃ আমরা তাে ‘ঈসা আলায়হিস সালামকে মানি।
মুহাম্মাদীঃ তবুও কেন খৃষ্টানরা বলে যে, আপনারা ‘ঈসা আলায়হিস সালামকে মানেন না?
হানাফীঃ এজন্যই যে, ওরা যেমন মানে আমরা অনুরূপ মানিনা।
মুহাম্মাদীঃ অনুরূপই লােকে আমাদের বলে। কেননা তারা যেমন ইমামদের মানে আমরা অনুরূপ মানি না।
হানাফীঃ তারা ইমামদের কেমনভাবে মানে?
মুহাম্মাদীঃ নাবীদের মতাে।
হানাফীঃ কীভাবে নাবীদের মতাে?
মুহাম্মাদীঃ তাদের অনুসরণ অনুকরণ করছে ও তাদের নামানুসারে ফিরকা তৈরি করছে। যদিও শুধুমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণের অধিকার রাখেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, ‘ঈসায়ী ও মীর্যায়ী কাফির। এতদসত্ত্বেও তারা তাদের নাবীদের নামানুসারে নামকরণ করে নিজেদেরকে আহমাদী ও ঈসায়ী বলে। আর আপনারা মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের নাবীকে পরিহার করে, ইমামের দিকে সম্বােধন করে নিজেদের হানাফী বলছেন। ঈসায়ী ও
আহমাদী তারা কি ভালাে নয়? অন্তত তাদের নামকরণ নিজেদের নাবীদের দিকে সম্বােধিত করেছে।
হানাফীঃ আপনারা নিজেদের হানাফী বলেন না, তাে আপনারা কি ইমাম আবু হানীফাকে মানেন না?
মুহাম্মাদীঃ আমরা নিজেদের হানাফী বলি না এর অর্থ তাে এই নয় যে, আমরা ইমামকেও মানিনা। আমরা তাঁকে ইমাম মানি কিন্তু নাবী মানি না। যেমন আপনারা তাঁর নামানুসারে নিজেদের হানাফী
বলেন। আপনিই বলুন, নিজেকে শাফি'ঈ বলেন না, তাে আপনি কি ইমাম শাফিঈ-কে মানেন না?
হানাফীঃ আমরা ইমাম শাফিঈকে অবশ্যই মানি কিন্তু যখন হানাফী বলছি তখন শাফি'ঈ বলার কি প্রয়ােজন?
মুহাম্মাদীঃ আমাদের মুহাম্মাদী বা আহলুল হাদীস বলার পর হানাফী বলার কী প্রয়ােজন?
হানাফীঃ আপনারা মুহাম্মাদী কেন বলছেন?
মুহাম্মাদীঃ আপনারা ইমামের নামে হানাফী বলছেন, আর আমরা নাবীর নামে মুহাম্মাদী বলবাে না? আপনিই বলুন, নাবী বড় নাকি ইমাম। মুহাম্মাদী সম্বােধন ভালাে নাকি হানাফী?
হানাফীঃ মুহাম্মাদী সম্বােধনই ভালাে। কিন্তু হানাফীও তাে ভুল নয়।
মুহাম্মাদীঃ আপনি বলুন, হানাফী হতে কে বলেছেন বা বর্ণনা করেছেন? আল্লাহ বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নাকি ইমাম বলেছেন?
হানাফীঃ কেউ তাে বলেননি।
মুহাম্মাদীঃ হানাফী থেকে কেউ যখন বলেনি তখন হানাফিয়্যাত ইসলামের কোনাে অংশই নয়। তবে হানাফী সম্বােধন কেন ভুল নয়?
হানাফীঃ আগে অনেকেই যারা নিজেদের হানাফী বলত তারা কি সব ভুল ছিল?
মুহাম্মাদীঃ আগের হানাফীরা আজকের মতাে না, তাদের হানাফী সম্বােধন মাযহাবী ও ফিরকা হলাে পথভ্রষ্টতা, তবে যদি ছাত্র শিক্ষকদের জন্য সম্বােধিত হলে সমস্যা নেই।
হানাফীঃ হানাফী বলা যদি সঠিক না হয় আহলে হাদীসও তাে সঠিক নয়। কারণ এটাও একটি মাযহাব।
মুহাম্মাদীঃ আহলে হাদীস কোনাে ফিরকা নয়, আহলে হাদীস ইসলামেরই অংশ, আর এই ইসলাম পালন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ ও তাঁর হাদীসের উপর ‘আমাল করলেই হয়। অতএব আহলে হাদীস না হলে কোনাে গতি নেই।
হানাফীঃ আপনারা যে আহলে হাদীস তাে আল্লাহ ও তাঁর রসূল এ কি আহলে হাদীস হতে বলেছেন?
মুহাম্মাদীঃ যদি আহলে হাদীস হতে না বলেন, তবে কি আহলুস্ সুন্নাহ থেকে বলেছেন? আপনারা যে আহলুস্ সুন্নাহ্ বলে থাকেন?
হানাফীঃ কুরআন ও হাদীসে কি নাবী সাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ করার আদেশ নেই?
মুহাম্মাদীঃ অনুসরণের কথা আছে কিন্তু আহলে সুন্নাত হওয়ার তাে আদেশ নেই।
হানাফীঃ অনুসরণ কেবলমাত্র সুন্নাতেরই হয়, আর সেটা আহলে সুন্নাত হয়েই সম্ভব।
মুহাম্মাদীঃ কীভাবে বুঝা যাবে যে, এটা রসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত?
হানাফীঃ এটা তাে হাদীস থেকেই বুঝা যাবে।
মুহাম্মাদীঃ অতএব আহলে হাদীস না হয়ে কেউ কীভাবে আহলুস্ সুন্নাহ্ হতে পারে? যেমন সুন্নাত ছাড়া ইসলাম বুঝা যায় না, অনুরূপ হাদীস ছাড়া সুন্নাত বুঝা দুষ্কর। এজন্যই তাে আমরা আহলুস্ সুন্নাহ্ বা আহলুল হাদীস। আপনারা নিজেদের আহলুস্ সুন্নাহ্ বলছেন আর কাজ করছেন আহলে বিদ্আতের। যেমন সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে ইমামের অনুসরণ করছেন। তাজিয়া, কুলখানি, চাল্লিশাহ, ঈদে মিলাদুন্নাবী ইত্যাদি, যদিও তা হাদীসে নেই। হাদীসে নেই এমন ‘আমাল যদি কেউ করে সে কীভাবে আহলুস সুন্নাহ্ হতে পারে?
হানাফীঃ আল্লাহ কুরআন মাজীদে মুসলিম নাম রেখেছেন তারপরও আপনারা কেন আহলে হাদীস বলেন?
মুহাম্মাদীঃ মুসলিম তাে আমাদের জাতিগত নাম, যেমন শিশু জন্মালে নাম রাখা হয়। কিন্তু আহলে হাদীস হল বৈশিষ্ট্যগত নাম, যা আমাদের কাজকে প্রকাশ করে। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুহাম্মাদ ও
আহমাদ ছাড়াও বৈশিষ্ট্যগত নামও ছিল। পবিত্র কুরআনের সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৪৭ নং আয়াতে ‘ঈসায়ীদের নাম আল্লাহ আহলে ইনজীলও দিয়েছেন। আর হাদীসে এসেছে- 1465। এই আহলে কুরআন! বি আদায় কর’- (তিরমিযী হা.৪৫৩, মুত্তাফাকুন আলায়হি হা. ১২১৪)। অতএব যারা কুরআন ও হাদীস মানে তাদের নাম আহলুল হাদীস এটা দলীলসম্মত।
হানাফীঃ যদি বৈশিষ্ট্যগত ও উপাধি নাম রাখা বিদ্আত না হয় তবে হানাফী বলাতে সমস্যা কোথায়?
মুহাম্মাদীঃ হানাফী বলাতে অনেক সমস্যা আছে, একজন হানাফী বলবে তাে অপর আর একজন শাফিঈ। এতে ইসলামে ফিরকা তৈরি হয় এবং ধর্মকে ভেঙ্গে খণ্ড-বিখণ্ড করা হয়। নাম এমন রাখতে হবে যাতে ইসলামের সমার্থক হয়। আর তা হলাে মুহাম্মাদী, আহলুস্ সুন্নাহ্ ও আহলুল হাদীস। কিন্তু হানাফী শাফি'ঈ ইত্যাদি নয়। হানাফীরা মানে শুধু ফিকহে হানাফী। বাদ থেকে যায় কুরআন হাদীস, যা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত আর ক্ষতিগ্রস্ত।
হানাফীঃ হাদীস তাে আমরাও মানি।
মুহাম্মাদীঃ শুধু মানেন কিন্তু ‘আমাল করেন না। যদি ‘আমাল করতেন তাহলে আহলে হাদীস হতেন। মানুষ অনেক কিছুই মানে কিন্তু যার সাথে সম্পর্ক বেশি সেদিকেই সম্বােধন করে। মুসলিমরা
‘ঈসা আলায়হিস-কে মানে কিন্তু ‘ঈসায়ী বলে না। কেননা তার প্রকৃত আহলুস্ সুন্নাহ্ কে?
শারী'আতের উপর ‘আমাল করে না। কাদিয়ানী বা মীর্যায়ীরাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানে কিন্তু আহমাদী বলে। কেননা তাদের আসল সম্পর্ক মির্যা গুলাম আহমাদ-এর সাথে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে নয়।
মানার দিকে তাে আপনারা হাদীসকেও মানেন আবার ইমাম শাফিঈকেও মানেন। তথাপিও না আপনারা নিজেকে আহলে হাদীস বলছেন আর না শাফি'ঈ। কেননা আপনাদের আসল সম্পর্ক ইমাম আবু হানীফার ফিকহের সাথে। না হাদীসের সাথে আর না ইমাম
শাফিঈর সাথে। আমরা তাে ইমামকেও মানি কিন্তু আমাদের সম্বােধন শুধুমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দিকে। কেননা তাঁরই অনুসরণ করি ও তাঁর সাথেই বেশি সম্পর্ক। এজন্যই না শাফি'ঈ বলি আর না হানাফী বলি।
হানাফীঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাে সবাই মানে।
মুহাম্মাদীঃ শুধু মানে অনুসরণ করে না। যদি অনুসরণই করতাে তবে হানাফী, শাফিঈ হওয়ার কী দরকার?
হানাফীঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-এর পরে আপনাদের কোনাে ইমাম নেই?
মুহাম্মাদীঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরেও কোনাে ইমামের প্রয়ােজন?
হানাফীঃ জীবন পরিবর্তনীয়, নতুন মাস্আলার উদ্ভব হচ্ছে, কার কাছ থেকে এর সমাধান নেয়া যাবে?
মুহাম্মাদীঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-এর থেকে।
হানাফীঃ তাঁর কাছ থেকে এখন কীভাবে? তিনি এখন কোথায়?
মুহাম্মাদীঃ আপনারা হায়াতুন্ নাবীর প্রবক্তা নন?
হানাফীঃ আমি তাে অবশ্যই হায়াতুন্ নাবীর প্রবক্তা।
মুহাম্মাদীঃ তারপরও ইমামের কি প্রয়ােজন? যা নেয়ার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে নিন।
হানাফীঃ এখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর কি দেবেন?
মুহাম্মাদীঃ যদি তিনি কিছুই না দেন তাে কেমন হায়াতুন নাবী আর তাতে লাভই বা কী?
হানাফীঃ হায়াত বা জীবিত থাকার তাে এ অর্থ নয় যে, তিনি গ্রহণ ও প্রদান করবেন।
মুহাম্মাদীঃ তবে হায়াত বা জীবিতের অর্থ কী?
হানাফীঃ হায়াতের অর্থ তাে হলাে তিনি সালাম শােনেন।
মুহাম্মাদীঃ তিনি কি শুধু সালাম শােনার জন্য জীবিত?
এ আবার কেমন জীবিত যে, তাঁর আশিক বা প্রেমিক তার চোখের সামনেই শির্ক ও বিদ্আত করছে আর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপচাপ।
পথভ্রষ্টতা দেখছেন আর শুধু সালামই শুনছেন? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকি শুধু সালাম শােনার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন দ্বীন শেখানাের জন্য ও শির্ক বিদআত নস্যাৎ করার জন্য নয়?
হানাফীঃ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতাে দ্বীন শিখিয়ে গেছেন, আর কী শেখাতে হবে?
মুহাম্মাদীঃ যদি তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীন শিখিয়ে যান তারপরও ইমামের কী প্রয়ােজন?
হানাফীঃ জীবনে অনেক নতুন নতুন মাস্আলা আসছে যা ইমামই সমাধান করতে পারেন। এজন্য ইমামের প্রয়ােজন অপরিসীম।
মুহাম্মাদীঃ আজকাল আপনাদের ইমাম কে? যিনি নতুন নতুন বিষয়াবলী সমাধান করে দিচ্ছেন।
হানাফীঃ আমাদের ইমাম তাে সব থেকে বড় ইমাম আবু হানাফী (রহিমাহুল্লাহ)।
মুহাম্মাদীঃ তিনি কখন জন্মগ্রহণ করেছেন?
হানাফীঃ ৮০ হিজরীতে। অর্থাৎ নাবী -এর মৃত্যুর ৭০ বছর পর।
মুহাম্মাদীঃ তার ব্যাপারেও কি হায়াতুন নাবীর মত হায়াতুল ইমাম অর্থাৎ ইমাম জীবিত এই ‘আক্বীদাহ্ রয়েছে আপনাদের?
হানাফীঃ না, তিনি তাে মারা গেছেন।
মুহাম্মাদীঃ আবূ হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ)-এর মৃত্যুর কত বছর হল?
হানাফীঃ প্রায় সাড়ে বারােশ' বছর।
মুহাম্মাদীঃ আপনারা ইমামকে যখন জীবিতই মনে করেন না আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জীবিত মনে করছেন। যদিও নাবী ও ইমামের মৃত্যুর মাঝে খুব বেশি বছর ব্যবধান ছিল না। তাহলে এ আবার কেমন কথা যে, মৃত্যু ইমামের ফিকাহ দিয়ে জীবনের সমস্যার সমাধান করছেন অথচ জীবিত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ফিকাহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে?
হানাফীঃ ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) স্বীয় জীবদ্দশায় দীনের নীতিমালাকে সামনে রেখে এমনভাবে ফিকাহ প্রমাণ করেছেন।
যাতে এক সাথে লাখাে সমস্যার সমাধান হবে কিয়ামাত পর্যন্ত।
মুহাম্মাদীঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কাজ কেন করেননি? কি এমন কারণ ছিল যা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থাপিত দ্বীন মাত্র একশ’ (১০০) বছর চলল?
কিন্তু ইমামের তৈরিকৃত দ্বীন এমনভাবে উপস্থাপিত যে, অদ্যাবধি কাজ দিচ্ছে বরং কিয়ামাত পর্যন্ত চলবে। এর কী এমন কারণ রয়েছে? নাবী সা:-এর একশ বছর পরই ইমামের প্রয়ােজন পড়ে গেল যা জীবনের সব সমস্যার সমাধান হবে? কিন্তু সেই ইমামের পর কোনাে নাবী বা ইমামের প্রয়ােজন হল না? সেই ইমাম, সেই ফিকাহ কাজ করছে, আর আপনারা সেই ইমামের নামে হানাফী বলে চলে আসছেন। যদি ইমাম সাহেব এমনই ছিলেন, যেমনটি আপনার দাবী, তাে তাঁকে নাবী সাঃ-এর পরিবর্তে নাবী হতে হত। যাতে কোনাে
মতভেদই থাকত না। না মুহাম্মাদী, না হানাফী, না শাফিঈ, না মালিকী না হাম্বালী-এর ঝগড়া থাকত। সবাই এক হত আর হানাফী হত। এখন আশ্চর্যের বিষয় হল যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জীবিত মানছেন আর মাস্আলাহ্ আবু হানীফার মানছেন? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কালিমা
পড়ছেন আর হানাফী হয়ে আবূ হানীফার অনুসরণ করছেন?
হানাফীঃ আপনারা কেন হায়াতুন্ নাবীর প্রবক্তা নন?
মুহাম্মাদীঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি জীবিত হন তাহলে আমরা প্রবক্তা। এই বিশ্বাসের যদি কোনাে লাভ হয় তাহলে আমরা এর প্রবক্তা। আপনারা যখন হানাফী হয়ে গেলেন তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত এটা কীভাবে বিশ্বাস করলেন?
এর চেয়ে কপাল পােড়া আর কে হতে পারে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় আবু হানীফার অনুসরণ করছে।
(যেখানে কোনাে নাবীকেই অনুসরণ করা যাবে না)। আপনারা ইমাম ও পীরের অনুসরণ করেন এর অর্থই হল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত নন অথবা
তিনি যথেষ্ট নন।
হানাফীঃ আপনারা একেবারেই হায়াতুন নাবীর প্রবক্তা নন?
মুহাম্মাদীঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বারযাখী (কবরের) জীবনের
প্রবক্তা কিন্তু দুনিয়ায় জীবিত, এর প্রবক্তা নই।
হানাফীঃ এর অর্থ কী?
মুহাম্মাদীঃ তিনি দুনিয়াতে জীবিত নন কিন্তু বারযাখী (কবরের) জীবনে আল্লাহর কাছে জীবিত।
হানাফীঃ তিনি যখন দুনিয়াতে জীবিতই নন তখন লােকেরা কীভাবে তার কাছ থেকে দ্বীন নিচ্ছে?
মুহাম্মাদীঃ যে ইমামকে আপনারা ধরে আছেন তিনি কি পৃথিবীতে আছেন?
হানাফীঃ তিনিও তাে দুনিয়াতে নেই।
মুহাম্মাদীঃ তথাপিও আপনারা কীভাবে তাঁর কাছ থেকে মাসআলা-মাসায়িল গ্রহণ করছেন?
হানাফীঃ তাঁর গ্রন্থাবলী আছে।
মুহাম্মাদীঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস নেই কি?
হানাফীঃ গ্রন্থাবলী তাে ইমামরা নিজেই লিখেছেন, আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামতাে হাদীস নিজে লিখেননি বরং লােকেরা পরবর্তীতে লিখেছে।
মুহাম্মাদীঃ ফিকহে হানাফী যা আপনারা মানেন কোন্টি ইমাম লিখে গেছেন? সেটাও তাে লােকেরা পরবর্তীতেই লিখেছে, তাও আবার সানাদবিহীন। আল্লাহ হাদীসের সংরক্ষণ করার দায়িত্ব নিয়েছেন কিন্তু ফিহের নয়।
হানাফীঃ আল্লাহ ফিকহের সংরক্ষণকারী কেন নন?
মুহাম্মাদীঃ এজন্যই যে, ফিকাহ লােকেদের মতামত, যা সঠিকও হতে পারে আবার ভুলও হতে পারে। ফিকাহ আল্লাহর ওয়াহী নয় যে, সঠিকই হবে। ফিকাহ প্রত্যেকটা ইমামের আলাদা আলাদা।
হাদীস শুধুমাত্র রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-এরই হয়। আর সবার জন্যই একই।
ফিকাহ পরিবর্তন হয় কিন্তু হাদীস নয়। অতএব হাদীস হল দ্বীন আর ফিকাহ দ্বীন নয়। এজন্যই আল্লাহ ফিহের সংরক্ষণকারী নন।
হানাফীঃ সত্যিই কি ফিকহে হানাফী ইমাম আবু হানীফাহ্ নিজে লিখেননি?
মুহাম্মাদীঃ কোনাে ‘আলিমকে জিজ্ঞেস করে নিন যদি বলতে পারেন বা প্রমাণ করতে পারেন.....।
হানাফীঃ মেনে নিলাম হাদীস রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কিন্তু হাদীস
সবাই বুঝতে পারে না।
মুহাম্মাদীঃ ফিকাহ কি সবাই বুঝতে পারে?
হানাফীঃ ফিকাহ খুবই সহজ।
মুহাম্মাদীঃ বিনা পড়াতেই কি চলে আসে?
হানাফীঃ না, পড়তে তাে হবেই।
মুহাম্মাদীঃ হাদীস পড়লে কি আসে না?
হানাফীঃ বুঝে তাে আসে কিন্তু বুঝা খুবই কঠিন, কেননা হাদীসে প্রচুর মতভেদ আছে। হাদীস বুঝার কাজ শুধু ইমামদেরই।
মুহাম্মাদীঃ এসব কথা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুশমনরাই বলে থাকে। তাছাড়া হাদীসে কোথায় মতভেদ? মতভেদ তাে ফিকাহতেই পরিলক্ষিত হয়, যার নামই হল রায় ও কথা। আর হাদীস তাে হল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কথা ও কাজ। যাতে মতভেদের কোনাে প্রশ্নই আসে না। কেননা দ্বীন হওয়ার কারণে আল্লাহ তার সংরক্ষণকারী।
হানাফীঃ ফিকাহতেও কি মতভেদ আছে?
মুহাম্মাদীঃ ফিকাহতে এত মতভেদ আছে যার কোনাে সীমা নেই। ফিকহে হানাফীর তিনজন বড় ইমাম- ১) ইমাম আবু হানীফাহ্, ২) ইমাম আবু ইউসুফ ও ৩) ইমাম মুহাম্মাদ। এই তিন ইমামের মধ্যে ফিক্হে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মাস্আলাতে মতভেদ
আছে। যেমনটি ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর গ্রন্থ মুহাওয়ালে লিপিবদ্ধ করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ :
১) ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, সলাতের ফার সাতটি, কিন্তু আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ বলেন, ছয়টি ফার। ইমাম সাহেব বলেন, আত্তাহিয়্যাতু পড়া অবস্থায় উযূ ভেঙ্গে গেলে সলাত হবে না, কেননা সপ্তম ফার এখনও বাকি আছে। সাহেবাইন বলেন, হয়ে যাবে কেননা ছ’টিই ফারূ পূর্ণ হয়ে গেছে। (হিদায়াহ্ ১১০)
২। কোনাে স্ত্রীর যদি স্বামী হারিয়ে যায় তবে কোনাে ইমাম
বলেন, স্ত্রী একশ' কুড়ি (১২০) বছর অপেক্ষা করবে। এক বর্ণনা মতে, আবু হানীফার এটাই মত। হানাফীদের অধিকাংশ ইমামের মত হল স্বামীর সমবয়সীদের সকলের মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
কেউ বলেন, নব্বই বছর অপেক্ষা করবে- (হিদায়াহ্ ২০৬ পৃ.)। এক হানাফী স্ত্রী হতভাগী কোথায় যাবেন?
৩। ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কোনাে কিছুর দ্বিগুণ ছায়া হলে ‘আসরের সময় হয়। আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ বলেন, একগুণ হলেই সময় হয়ে যায়। (হিদায়াহ্ ৪৬ পৃ.)
৪। ইমাম আবু হানীফাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, চারজন হলে জুমু'আহ্ হবে, কিন্তু সাহেবাইন বলেন, তিনজন হলেই হবে(হিদায়াহ্ ১৪৯)। এছাড়াও অনেক রয়েছে।
হানাফীঃ এটা তাে ‘আলিমদের রায়ের মতভেদ। ইমাম সাহেব কোথায় মতভেদপূর্ণ কথা বলেছেন?
মুহাম্মাদীঃ ইমাম সাহেবও মতভেদপূর্ণ রায় দিয়েছেন। যেমন ইমাম মুহাম্মাদ বলেন, আবু হানীফার একটি রায় হল ব্যবহারকৃত পানি নিজে পবিত্র কিন্তু অন্য কোনাে জিনিসকে পবিত্র করতে পারেনা । অন্য মতে ব্যবহারকৃত পানি নাপাক। (হিদায়াহ্ ২২ পৃ.)
এই লােকেদের দৃষ্টান্ত হল- “বৃষ্টি থেকে পালানাে আর ঝর্ণার নিচে দাঁড়াল।” অর্থাৎ টকের ভয়ে তেঁতুল তলা। হাদীস ছেড়েছে এজন্যই যে, এতে মতভেদ আছে আর ফিহের কাছে আশ্রয় নিয়েছে (মাআল্লাহ)। হাদীসে মতভেদের কোনাে গন্ধ নেই। পক্ষান্তরে ফিকাহ হল মতভেদের কারখানা।
হানাফীঃ আপনারা আমাদের মতাে কোনাে ইমামকে গ্রহণ করেননি যাতে তাঁর তাক্বলীদ করা যায়?
মুহাম্মাদীঃ না। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে কাউকে গ্রহণ করার
কোনাে প্রয়ােজন নেই। দ্বিতীয়ত নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরে এমন কোনাে ব্যক্তি নেই যিনি নির্দোষ। আমি যদি কাউকে গ্রহণ করি তাতে আমার ধর্মীয় সমস্ত বিষয় স্পষ্ট হবে না। হানাফী হতে হলে প্রথমে আমাকে ‘আক্বীদায় মাতুরীদী হতে হবে। তারপর কখনাে কাদিরী, তাে কখনাে চিশতী, তাে কখনাে শাহরাওয়ারদী, কখনাে নকশেবন্দী। তাছাড়া একজনকে গ্রহণ করলে বাকি ইমামদের অস্বীকার করা হবে।
একজনকে গ্রহণ করলে ফিরকা তৈরি হয়। ধর্মকে টুকরাে টুকরাে করা হয়। একটি দীন বা ধর্মের এমনিতেই চারটি ভাগ হয়ে গেল।
কুরআনে আছে, আল্লাহ বলেন : “তােমরা দলে দলে বিভক্ত হয়াে ”- (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩: ১০৩)।
আল্লাহ তাআলা নাবীকে বলেন, “যারা নিজেদের (পূর্ণ পরিণত) দীনকে খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করে নিয়েছে আর (আপন আপন অংশ নিয়ে) দলে দলে ভাগ হয়ে গেছে তাদের কোনাে কাজের সাথে তােমার কোন সম্পর্ক নেই।” (সূরা আল আ'আম ৬ : ১৫৯)
নাবীঃ এর পর কোনাে একজনকে গ্রহণ করা নিজেকে মুশরিক বানানাের পর্যায়ভুক্ত।
হানাফীঃ আপনাদের ফিরকা কখন তৈরি হল?
মুহাম্মাদীঃ আমাদের ফিরকা তৈরি হয়নি। ফিরকা তাে হলাে যা মূল থেকে বিচ্ছিন্ন, নাবী -এর পর কোনাে একজনকে গ্রহণ করে তাঁর নামানুসারে ফিরকার নাম রেখে দেয়া আর সেই ইমামের
তাক্বলীদ বা অন্ধানুসরণ করা। আমরাই তাে মূল তথা আহলুল হাদীস, অর্থাৎ সেই সময় থেকেই যখন থেকে হাদীস আছে। আর হাদীস সেই সময় থেকে আছে যখন থেকে রসূলুল্লাহ এর ছিলেন।
আমরা নাবীর পর কোনাে ব্যক্তিকে গ্রহণ করে ফিরকা তৈরি করি না। আমরা কোনাে ফিরকা নই, আমরাই আসল। আমরা নাবীরই সাথে আছি হাদীসের অনুসরণ করে।
হানাফীঃ আপনারা আমাদের মতাে আহলুস্ সুন্নাহ্ নন কেন?
মুহাম্মাদীঃ আপনারা কোথায় আহলুস্ সুন্নাহ্? আপনারা তাে হানাফী। আহলুস্ সুন্নাহ্ তাে আমরা যা হানাফী, শাফিঈ কিছুই নয়, শুধু আহলুস সুন্নাহ্।
হানাফীঃ আপনারা তাে বলেন যে, আমরা আহলুল হাদীস।
মুহাম্মাদীঃ আহলুল হাদীস ও আহলুস্ সুন্নাহ্র মধ্যে কোনাে পার্থক্য নেই। আহলুল হাদীসই হল প্রকৃত আহলুস্ সুন্নাহ্।
হানাফীঃ আপনারা আহলুল হাদীস কেন?
মুহাম্মাদীঃ যাতে হানাফী আহলুস্ সুন্নাহ্ ও প্রকৃত আহলুস্ সুন্নাহর মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। আহলুস্ সুন্নাহ্ হল তারাই যারা কেবল রসূলুল্লাহ এর সুন্নাতের অনুসরণ করে, কোনাে ইমামের মুকাল্লিদ নয়। আর তারা সুন্নাত সেটাকেই মনে করে যা
রসূলুল্লাহ আল থেকে সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
মুহাম্মাদীঃ আহলুস্ সুন্নাহর সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনাে ইমামের তাক্বলীদ করা মােটেও অন্তর্ভুক্ত নয়। আহলুস্ সুন্নাহ্ তাঁকেই বলা হয় যিনি রসূলুল্লাহ -এর সুন্নাতের উপর চলবেন।
আর হানাফী তাকেই বলা হয় যিনি ইমাম আবু হানীফার তাক্বলীদ করেন ও ফিহে হানাফীর উপর চলবেন। এখন দুটোকে অর্থাৎ হানাফী এবং আহলুস্ সুন্নাহূকে এক প্রমাণ করতে হবে, রসূলুল্লাহ -এর সুন্নাত ও ফিক্বহে হানাফীকে একই প্রমাণ করা আবশ্যিক, যা একেবারেই অসম্ভব। যখন রসূলুল্লাহ এর সুন্নাত ও ফিকহে হানাফী এক প্রমাণ পাওয়া সম্ভব নয়, তখন আহলুস্ সুন্নাহ্ ও হানাফী একই এটা সাব্যস্ত করা অসম্ভব। উভয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকাটা স্বাভাবিক।
হানাফীঃ আমি জানি কিন্তু পার্থক্যটা কোনাে ব্যাপার নয়।
মুহাম্মাদীঃ পার্থক্য তাে আহলুস্ সুন্নাহ্ ও আহলুল হাদীসে নেই, দুটোই এক। কেননা সুন্নাতও রসূলুল্লাহ সাঃ-এর এবং হাদীসও রসূলুল্লাহ এর। হানাফী ও আহলুস সুন্নাতে তাে বিস্তর পার্থক্য বা বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
হানাফীঃ কী পার্থক্য রয়েছে?
মুহাম্মাদীঃ এটাই যে, হানাফিয়্যাত উম্মাতের দ্বারা তৈরিকৃত আর সুন্নাত হল নাবী এ-এর। যা পার্থক্য নাবী এবং উম্মাতের, সেই পার্থক্যই রয়েছে হানাফী এবং আহলুস সুন্নাহর মধ্যে। হানাফী ব্রেলভী যে আহলুস্ সুন্নাহ্ হিসেবে প্রসিদ্ধ ওটা শুধুমাত্র শী'আদের কারণে। কেননা শী'আদের বিপরীতে সকলেই আহলুস্ সুন্নাহ্।
ব্রেলভীদের সংখ্যাধিক্যের কারণে এই নামে তারা বেশি প্রসিদ্ধ। কিন্তু শী'আদের বলাতে ব্রেলভী আহলুস সুন্নাহ্ হতে পারে না। যেমন হিন্দু ও ইংরেজদের বলাতে কাদিয়ানী মুসলিম হতে পারে না। কোন্ জিনিস কি! এটা জানার জন্য তার বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে হয়।
হানাফীঃ ব্রেলভী শুধু শী‘আদের বলাতে হয়, তারাও নিজেদের দাবী অনুযায়ী আহলুস্ সুন্নাহ্।
মুহাম্মাদীঃ এই দাবী জোরপূর্বক, শুধু দাবীতে কি হবে? যদি কেউ ব্রেলভীর দিকে মুখ করে আর কিবলাকে কা'বাহ্ বলে, কুফার রাস্তায় যাবে আর দাবী করবে মাদীনার। তাকে কে সত্যবাদী বলবে।
জোরপূর্বক দাবী তাে কাদিয়ানীরাও করে। তবে কি তারা তাদের দাবী অনুযায়ী কাদিয়ানী থেকেও মুসলিম হতে পারে?
হানাফীঃ আপনারাও তাে নিজেকে আহলুস্ সুন্নাহ্ বলে দাবী করছেন।
মুহাম্মাদীঃ দাবী নয় প্রকৃতই আহলুস্ সুন্নাহ্। কারণ আমরা শুধুমাত্র নাবী সাঃ-এরই অনুসরণ করি এবং তাঁকেই আমরা পথ প্রদর্শক ও ইমাম বলে মানি। তাঁর দিকে ছাড়া কারাে দিকে আমরা নিজেদের সম্বােধন করি না। আমরাও আহলুস্ সুন্নাহ্ হতাম না যদি আপনাদের মতাে কোনাে ইমামের মুক্বাল্লিদ হতাম।
হানাফীঃ আপনাদেরকে তাে ওয়াহাবী বলে।
মুহাম্মাদীঃ ওয়াহাবী তাে আপনারা বানাচ্ছেন নতুবা আমরা ওয়াহাবী কোথায়?
হানাফীঃ আমাদের কী প্রয়ােজন আপনাদের ওয়াহাবী বানানাের।
মুহাম্মাদীঃ যাতে একই গােসলখানায় সকলেই নগ্ন হতে পারেন। সকলেই যেহেতু মুক্বাল্লিদ কেউ কাউকে বিদ্রুপ বা উপহাস করতে পারেন।
হানাফীঃ মুকাল্লিদ হওয়াটাও কী উপহাসের বিষয়?
মুহাম্মাদীঃ অবশ্যই! যদি কেউ বুঝে তাে।
হানাফীঃ উপহাস কীভাবে?
মুহাম্মাদীঃ মুক্বাল্লিদ তাে মানুষকে জন্তু বলারই নামান্তর। কেননা তাক্বলীদ বলা হয় জন্তুর গলায় পট্টি পড়ানােকে। এটা জানােয়ারের জন্য প্রযােজ্য। এ কারণেই আল্লাহ ও তাঁর রসূল :
এই শব্দটি মানুষের জন্য ব্যবহার করেননি, বরং কুরআন ও হাদীসে এই শব্দটি শুধুমাত্র জানােয়ারের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।
হানাফীঃ অপনারা কি কারােই তাক্বলীদ করেন না?
মুহাম্মাদীঃ তাক্বলীদ যখন জানােয়ারের জন্য, মানুষের জন্য নয়। তখন আমরা কেন কারাে তাক্বলীদ করবাে?
হানাফীঃ শুনেছি যে, তাক্বলীদ ছাড়া কোনাে গতি নেই, তাক্বলীদ তাে যে কেউ করে। তাক্বলীদ তাে আপনারাও করেন বাবা-মায়ের ও শিক্ষকদের।
মুহাম্মাদীঃ এর নামই যদি তাক্বলীদ হয় আর আমরা সেটা করি তবে আপনারা কেন আমাদের গায়ের মুকাল্লিদ বলেন? যদি পিতা মাতা ও শিক্ষকের কথা মানা তাক্বলীদ হয় তবে আপনারা আপনাদের ইমামকে কেন মুক্বাল্লিদ বলেন না?
হানাফীঃ আপনারা কি নাবী সাঃ-এরও তাকলীদ করেন না?
মুহাম্মাদীঃ নাবী সাঃ যখন তাক্বলীদ করতেই বলেননি তাে তাঁর তাক্বলীদ কীভাবে ও কেন করবাে?
হানাফীঃ বলতে চাচ্ছেন আপনারা নাবী -এরও তাক্বলীদ করেন না?
মুহাম্মাদীঃ নাবী ; যখন তাক্বলীদ করতেই বলেননি তাে তাঁর তাক্বলীদ কীভাবে ও কেন করবাে? তাছাড়া তাক্বলীদ বলা হয় কারাে কথা বিনা দলীলে মানা। নাবী -এর প্রত্যেকটা কথা ও কর্ম শারী'আত। নাবী -এর তাক্বলীদ হতেই পারে না। তাক্বলীদ থেকে তাে আল্লাহ সকল মানুষকে বাঁচিয়েছেন। এটা তাে বিশাল বড় অভিশাপ। এর থেকে ভ্রষ্টতা আর কি হতে পারে যে মানুষ তার গলায় এমন বেড়ি পড়ছে যে সম্পর্কে সে অবগত নয়।
হানাফীঃ আমরা আমাদের ইমামকে জানি না?
মুহাম্মাদীঃ আপনাদের কে বলল যে, তিনি আপনাদের ইমাম? তাঁকে ধরাে এবং তার পথ গলায় ঝুলাতে?
হানাফীঃ যখন আপনারা একেবারেই কারাে তাক্বলীদ করেন না তাে আপনাদের ওয়াহাবী বলা হয় কেন?
মুহাম্মাদীঃ এটাই আমরা বুঝতে পারি না যে, হানাফীরা একদিকে গায়ের মুক্বাল্লিদ বলে আবার ওয়াহাবীও বলে। অথচ কেউ গায়ের মুক্বাল্লিদ হলে ওয়াহাবী কীভাবে? আর যদি ওহাবী হয় তাে গায়ের মুকাল্লিদ কীভাবে? প্রকৃত কথা হল যত বিদৃ'আতী আছে সকলেই আহলুল হাদীসদের ওপর হিংসা ও বিদ্বেষ পােষণ করে। এ কারণেই তারা বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করে। যেমনটি সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মুহাম্মাদ -কেও বিরােধীরা কখনাে পাগল, কখনাে
যাদুকর আবার কখনাে মিথুক বলেও অভিহিত করেছে। পীর ‘আবদুল কাদির জীলানী-এর দৃষ্টিতে ‘আহলুল হাদীস আমরা যে হাক তার সাক্ষী তার সত্যায়ন করেছে। বিদ্আতীদের প্রকৃষ্ট নিদর্শন
হল, তারা আহলুল হাদীসদের বিরূপ মন্তব্য করেও আজেবাজে বলে। আহলুস্ সুন্নাহর শুধুমাত্র একটাই নাম আর তা হল আহলুল হাদীস। আবদুল কাদির জীলানী-এর উক্তি থেকে প্রমাণিত হয় যে, আহলুল হাদীসকে যারা আজেবাজে বলে, তারা বিদ্আতী। আর যে বিদ'আতী সে আহলুস সুন্নাহ্ হতেই পারে না।
নির্যাস হল :
১। আহলুল হাদীসকে যারা আজেবাজে বলে তারা আহলুস্ সুন্নাহ্ হতেই পারে না।
২। যারা আহলুল হাদীসের বিভিন্ন নামে ভূষিত করে বা উল্টোপাল্টা নাম রাখে, তারা সকলেই বিদ'আতী আর বিদ'আতী আহলুস্ সুন্নাহ্ হতেই পারে না।
৩। আহলুস্ সুন্নাহ শুধুমাত্র আহলুল হাদীস। বাকিরা সকলেই জোরপূর্বক দাবীদার।
৪। যখন ‘আবদুল কাদীর জীলানী শুধুমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত দল আহলুস্ সুন্নাহকেই বলেছেন এবং আহলুস্ সুন্নাহ্ শুধুমাত্র আহলুল হাদীসদের বলেই উল্লেখ করেছেন, তখন তিনি নিজেই আহলুল হাদীস ছিলেন।
৫। যখন জীলানী নিজেই আহলুল হাদীস ছিলেন এবং পীরে কামিল ছিলেন। সমস্ত মুসলিম অবগত যে, আহলুল হাদীসদের বড় বড় ওয়ালী অতিবাহিত হয়েছেন।
৬। আলিম নামক জাহিলদের এটা বলা ভুল যে, কোনাে আহলুল হাদীস ওয়ালী হয়নি।
৭। যখন মুক্তিপ্রাপ্ত দল আহলুস্ সুন্নাহ্ এবং আহলুস্ সুন্নাহ্ শুধুমাত্র আহলুল হাদীস আর ওয়ালীর মুক্তিপ্রাপ্ত হওয়াটা জরুরী, তাে প্রমাণিত হল ওয়ালী শুধুমাত্র আহলুল হাদীসই হতে পারে।
৮। যখন ওয়ালী শুধুমাত্র আহলুল হাদীসই হতে পারে তখন প্রমাণিত হল যে, যত ওয়ালী অতিবাহিত হয়েছেন তাঁরা সকলেই আহলুল হাদীস ছিলেন।
৯। যিনি আহলুল হাদীস ছিলেন না, তিনি ওয়ালীও ছিলেন না। যদিও অজ্ঞরা তাদের প্রসিদ্ধ করে রেখেছে।
১০। মুক্তির জন্য ও ওয়ালী হওয়ার জন্য আহলুল হাদীস হওয়া আবশ্যক।
হানাফীঃ আপনি তাে আমাকে ভয় দেখিয়ে দিলেন।
মুহাম্মাদীঃ আপনি তাে ভাগ্যবান। আপনি বুঝতে পেরেছেন। তাছাড়া কত মানুষ যারা মুক্তির চিন্তাই করে না। শুধু দলাদলি নিয়ে ব্যস্ত। আসল কথা হল আগে হাক্ব বা সত্যকে জানুন, তারপর অটল থাকুন হাক্বের উপর।
হানাফীঃ সত্যের সন্ধান কীভাবে পাওয়া যাবে? সকলেই নিজেকে হাকৃপন্থী বলে।
মুহাম্মাদীঃ হাক তাে নাবী -এর সুন্নাতকে বলে এবং তার উপর ‘আমাল করাই হল মুক্তির পথ।
হানাফীঃ সবাই তাে বলে যে, আমি হাক্বের উপর আছি। কীভাবে বুঝাবাে কে হাকের উপর আছে?
মুহাম্মাদীঃ যে দীনে বা ধর্মে মিশ্রণ ঘটায় না ওটা হাক্ব। এর ভিত্তিতে প্রত্যেককে যাচাই করতে পারেন। দুনিয়ায় প্রত্যেক ফিরকা নাবী -এর পর নিজেকে কোনাে না কোনাে দিকে সম্বােধন
করেছে। আর এটাই মিশ্রণের দলীল। আহলে হাদীসই এমন একটি জামা'আত যা কোনাে বা কারাে দিকে সম্বােধিত নয় বরং শুধুমাত্র নাবী সাঃ-এর সুন্নাতের উপর ‘আমাল করে যা হাদীস থেকে
প্রমাণিত।
হানাফীঃ সুন্নাতের অর্থ কী?
মুহাম্মাদীঃ যা রসূলুল্লাহ -এর সুন্নাত। যে রাস্তা রসূলুল্লাহ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তাকে সুন্নাত বলে আর তার উপর ‘আমালকারীকে আহলুস্ সুন্নাহ্ বলা হয়।
হানাফীঃ রসূলুল্লাহ -এর সুন্নাত কীভাবে ও কোথা থেকে জানবাে?
মুহাম্মাদীঃ হাদীস পড়ে ও হাদীসের ‘আলিমকে জিজ্ঞেস করে।
হানাফীঃ হানাফী, আহলে হাদীসদের মধ্যে যে কেউ হাদীসের ‘আলিম হয়।
মুহাম্মাদীঃ হাদীসের ‘আলিম তাে মূলত আহলে হাদীসই হয়, অন্য ‘আলিমদের ক্ষেত্রে তাে হাদীস আসে না। যদিও আসে তবে চলে না। হাদীস ও সুন্নাতের ব্যাপারে কিছু জানতে হলে আহলুল
হাদীস ‘আলিমদের কাছে জানতে হবে। ফিহের কোনাে কথা জানতে হলে হানাফী ‘আলিমদের জিজ্ঞেস করুন।
হানাফীঃ কোন্ কোন্ হাদীস গ্রহণযােগ্য?
মুহাম্মাদীঃ হাদীসের গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন স্তর আছে, কিন্তু উচ্চস্তরের, কিছু মধ্যমস্তরের ও কিছু নিম্নস্তরের।
প্রথম স্তরের তিনটি হল : বুখারী, মুসলিম এবং মুওয়াত্তা ইমাম
মালিক (এতে কিছু য'ঈফ হাদীস আছে)।
দ্বিতীয় স্তরের হল : তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি।
তৃতীয় স্তরের হলঃ ত্বহাবী, ত্ববারানী ও বায়হাক্বী ইত্যাদি গ্রন্থসমূহ। শুধুমাত্র সহীহ হাদীসের উপর ‘আমাল করতে হবে।
হানাফীঃ গ্রন্থের শ্রেণি বিভাগ কে করলাে?
মুহাম্মাদীঃ আগের ‘উলামায়ে কিরাম। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবীর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্ পড়ন। ইন্শা-আল্ল-হ আপনি সব কিছু জানতে পারবেন।
হানাফীঃ এই ভাগ কি সব ফিরকা মানে?
মুহাম্মাদীঃ আহলে সুন্নাতের দাবীদার সকলেই মানে।
হানাফীঃ প্রথম স্তরের গ্রন্থে কি সব হাদীসই সহীহ?
মুহাম্মাদীঃ হ্যাঁ, প্রায় সব হাদীসই সহীহ (বুখারী, মুসলিমের সহীহ হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য আছে) অবশ্য মুওয়াক্কাতে কিছু দুর্বল হাদীস আছে।
হানাফীঃ আমি শুনেছি যে, আপনারা তাক্বলীদকেও শির্ক বলেন। তাক্বলীদের সাথে শির্কের কি সম্পর্ক?
মুহাম্মাদীঃ সম্পর্ক নেই কেন? তাক্বলীদ এবং শির্কের তাে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। শির্ক উৎপন্ন হয় তাক্বলীদ থেকে। প্রত্যেক মুশরিক প্রথমে মুকাল্লিদ হয় পরে মুশরিক। যদি তাক্বলীদ না থাকে। তাে শির্ক কখনাে জন্ম নেয় না। শিরক তাক্বলীদ থেকেই জন্ম নেয়। শির্ক তাক্বলীদের ভূমিতেই উৎপন্ন হয়। কেননা তাক্বলীদ শুধুমাত্র অজ্ঞ ও নির্বোধই করে থাকে। আর শিরকের ক্ষেত্রে এমনটিই পরিলক্ষিত হয়, যেখানে অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতা পাওয়া যায়। উভয়টার জন্য অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতা এবং অন্ধ বিশ্বাস কাজ করে। এ দুটোর ভিত্তি হল কাউকে সীমার বাইরে প্রাধান্য দেয়া ও তার কাছে নিজেকে নগণ্য মনে করা। এটাই হল ‘ইবাদাতের অর্থ। আর এমনটিই মুক্বাল্লিদ তার ইমামের ক্ষেত্রে করে থাকে। সে তার ইমামকে এত বড় মনে করে যে, তার তুলনায় সে নিজেকে জানােয়ার মনে করে। আর জানােয়ার বা জন্তুর মতাে গলায় মালা পরিধান করে নিজেকে ধন্য মনে করে এবং আস্তে আস্তে তাকে আল্লাহর শারীক বানিয়ে দেয়।
হানাফীঃ আল্লাহর শারীক কীভাবে?
মুহাম্মাদীঃ এভাবেই যে, তাঁর কথাকে ইলাহীর হুকুম মনে করে।
হানাফীঃ এটা শিক, আবার শারীক করা কীভাবে?
মুহাম্মাদীঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন : “কী! তাদের কি এমন শারীক আছে যারা তাদের জন্য দীনের বিধি-বিধান দিয়েছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?” (সূরা আশ শূরা- ৪২ : ২১)। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, যার কথা ও কিয়াস দীন মনে করে। এটাকে আল্লাহ নিজের শারীক মনে করেন। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া নাবী -এর কথাও দীন হতে পারে না। কিন্তু মুক্বাল্লিদ তার ইমামের কথাকে দীন মনে করে। সূরাহ্ আত্ তাওবাহ-তে আল্লাহ তা'আলা স্পষ্ট করে বলেছেন : “তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদেরকে তাদের রবরূপে গ্রহণ করেছে”- (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯:৩১)। আজকাল মুসলিমরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে নিজেদের ‘আলিম ও শায়খদের রব বানিয়ে নিয়েছে। ‘আদী ইবনু আবূ হাতিম ঝালও হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি গলায় স্বর্ণের ক্রুশ পরে নাবী সাঃ-এর সামনে এলাম। তিনি (রাঃ) বললেন : হে ‘আদী! এই মূর্তিটি ফেলে দাও। আমি তাঁকে সূরা বাক্বারা পাঠ করতে শুনেছি, “তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিতদের ও সংসার বিরাগীদের রবরূপে গ্রহণ করেছে”- (সূরাহ্ আত্ তাওবাহ্ ৯ : ৩১)। তিনি সাঃ বললেন : এ কথা নয় যে, তারা এদের ‘ইবাদাত করত। বস্তুত এরা যদি তাদের জন্য কিছু হালাল করে দিত তখন তারা তা হালাল বলে গ্রহণ করত; এরা যখন কোনাে কিছু হারাম বলে স্থির করত তখন তারাও তা হারাম বলে গ্রহণ করত (তিরমিযী হা. ৩০৯৫: হাসান)।
হানাফীঃ আমরা তাে আমাদের ইমামকে রব বানাই না বা রব মানি না। আমরা তাে শুধু ইমাম মানি।
মুহাম্মাদীঃ তারাও তাে রব বলত না। কিন্তু রবের মর্যাদা দিত। এজন্যই আল্লাহ এটাকে রব বানানাে বলেছেন। নাম পরিবর্তনে প্রকৃত জিনিস পরিবর্তন হয় না। প্রকৃত প্রকৃতই থাকে। নাম যা-ই রাখা হােক। আচ্ছা আপনারা ইমাম বানান কেন?
হানাফীঃ দীনের মাসআলাহ্ নেয়ার জন্য।
মুহাম্মাদীঃ এ কাজই তাে ইয়াহূদী ও নাসারারা করত। যেমনটি ‘আদী ইবনু হাতিম প্রিয় স্বীকার করেছেন। এ ধরনের ইমামের কি ইসলামে কোনাে অস্তিত্ব বা জায়গা আছে?
হানাফীঃ কুরআনে কি নেই যে, আমরা তাদেরকে করেছিলাম নেতা।
মুহাম্মাদীঃ এটা তাে নাবীদের ব্যাপারে। নাবী তাে ইমাম হতে পারেন বরং ইমাম হন বা ছিলেন। কেননা আল্লাহ তাকে ইমাম বানান। নাবী ছাড়া কেউ ইমাম হতে পারে না।
হানাফীঃ আপনি বলেছেন, নাবী ছাড়া কেউ ইমাম হতে পারে না। যদিও ইসলামে অনেক বড় বড় ইমাম অতিবাহিত হয়েছেন।
মুহাম্মাদীঃ দীনের ইমামের অর্থ হল তারা ধর্মীয় বিদ্যায় বড় ‘আলিম ছিলেন। অনুসরণযােগ্য নয়, যাকে দীনের মাসআলাহ্ তৈরি ও ধর্মীয় অনুসরণ করানাের হাক্ব বা অধিকার আছে। যার নামে তাক্বলীদী মাযহাব চালানাে যায়। এ ধরনের ইমামের অস্তিত্ব ইসলামে নেই। সর্বপ্রথম এই ‘আক্বীদাহ্ শী'আরা তৈরি করেছে। আহলে সুন্নাত এই ‘আক্বীদাহ্ তাদের থেকে নিয়েছে। শী'আরা এই
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ কাজ চলছে..
