Header Ads Widget

ইতিহাসে সম্প্রীতি

ইতিহাসে সম্প্রীতি -- স্বাধীনতার পথে পথে
কলমে মহ: এমদাদুল আনসারি
ইতিহাসে সম্প্রীতি: পর্ব-১

স্বাধীনতার পথে পথে

এই বিষয়ে কলম ধরার পেছনের গল্পটা: -
সারা জীবন ধরে শুনে আসছি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের কোন অবদান নেই। বিগত কয়েক বছর ধরে ইতিহাস চর্চা করে এই প্রচারে সন্দেহের দানা বাঁধে। শুরু করি এই বিষয়ে পড়াশোনা, আর পড়াশোনার মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে জানতে পারি – "এই রটনা সত্যের বিকৃতি ছাড়া আর কিছু নয়''। এই মহান ভারতবর্ষে আবহমান কাল থেকে হিন্দু-মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মাবলাম্বীর ভাইয়েরা পাশাপাশি বাস করে আসছে। "কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের একে অপরের মধ্যে গড়ে উঠেনি আন্তরিক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।" আর এই গড়ে না ওঠার মূল অস্ত্র হিসেবে কাজ করেছে সত্য ইতিহাসের বিকৃতি যা আজ নীচ থেকে উচ্চ ডিগ্রী পর্যন্ত সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হলে এই বিষাক্ত বীজের বাসা বাঁধতে হত না। "বর্তমান সিলেবাসে বিশেষ করে পঞ্চম থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করে একজন ছাত্রের মনে মুসলিমদের প্রতি খারাপ ধারণা আসবে এটাই স্বাভাবিক, এমনকি একজন মুসলিম ছাত্রের মনেও নিজেদের প্রতি একই ধারণা জন্মাবে।" আর এর বাস্তব ঘটনা বলি আমার কলেজ জীবনে। আমার এক হিন্দু বন্ধু একসময় বলেও ছিলো তোমাদের রাজা বাদশাহরা ভালো নয়, তারা এখানে এসে শুধু শোষণ করেছে। আমি বললাম একদম ঠিকই বলেছো "তবে তুমি কি জানো সত্য ইতিহাস অন্য কথা বলে?" আমাদের হালকা আলোচনা হয়েছিল, আর বাকিটা জানার জন্য "সুরজিৎ দাশগুপ্তের - ভারতবর্ষ ও ইসলাম" বইটি পড়তে বলেছিলাম। আসলে সত্যি কথা বলতে অধিকাংশ হিন্দু বা অমুসলিম ভাইয়েরা জানে না বা জানতে দেওয়া হচ্ছে না ভারতবর্ষে মুসলিমদের পনে এক হাজার বছরের রাজত্বের সঠিক ইতিহাস। তাই সময়ের দাবী আজকের প্রজন্মের কাছে সত্য ইতিহাস তুলে ধরতে হবে জাতি দেশের কল্যাণের জন্যে, আর ছড়িয়ে দিতে হবে সম্প্রীতি আর সহানুভূতির বার্তা গোটা মানব জুড়ে।



ইতিহাসে সম্প্রীতি: পর্ব-২

বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল রাজদণ্ড রূপে

ঐতিহ্যহীন জাতি বেওয়ারিশ লাশের মতোই পরিচয়হীন। বস্তুত ইতিহাসের হাত ধরেই মানুষের সামনে ধরা দেয় ঐতিহ্য। তাই প্রতিটি জাতি ও ব্যক্তির জন্যই নিজ গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য এক অমূল্য সম্পদ।

সঠিক ইতিহাস চর্চাই জাতিকে আত্মসচেতন , দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত করে তোলে। তাই সুদীর্ঘ একশো নব্বই  বছর ব্রিটিশ বিরোধি স্বাধীনতা সংগ্রামের অজানা সত্য ইতিহাস তুলে ধরার পূর্বে এই মহান ভারতবর্ষে কিভাবে ইংরেজদের আগমন ঘটেছিল, তা টুকরো ইতিহাস মননের আলোকে আমরা  জানার চেষ্টা করবো।

১৯৪৭ সালকে যদি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ বছর ধরা হয় তাহলে ১৭৫৭ তে পলাশীর প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলার পতনেই হয় তার সূত্রপাত। অর্থাৎ মুসলিম শাসনের অবসান। এই যুদ্ধের প্রহসনে যেসব বেঈমানরা ইংরেজদের সঙ্গে সহযোগিতা করে সিরাজের পরাজয় ঘটিয়েছিল বা ভারতকে বৃটিশের হাতে শোষণের উদ্দেশ্যে তুলে দেবার বন্দোবস্ত করেছিল, তাদের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিশেষভাবে স্মরণীয় মীরজাফর, জগৎশেঠ, বাবু কৃষ্ণদেব, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, রাধাবল্লভ, ইয়ার লতিফ, কান্তমুদি নন্দকুমার গোবিন্দসিংহ প্রমুখের বিশ্বাসঘাটকতা ও ছল চাতুরির জোরে জয়লাভ করে ইংরেজ শাসকরা ভারতবর্ষে তাদের সাম্রাজ্যের সূচনা করলো, শুরু হল আমাদের দীর্ঘ প্রায় দুই শতাব্দীব্যাপী পরাধীনতার ইতিহাস। স্কুলের সরকারি ইতিহাসে এসব তথ্য না পেলেও বেসরকারী ইতিহাসে সংরক্ষিত রয়েছে। যেমন-  শ্রী নিখিল নাথ রায়ের ঐতিহাসিক চিত্র "মুর্শিদাবাদ কাহিনী", প্রখ্যাত ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রয়ের যুগান্তকারী রচনা "সিরাজদ্দৌলা" প্রভৃতি গ্রন্থে।

১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ এই একশো নব্বই বছরে হাজার হাজার মুসলিম, হিন্দু, শিখ, নিম্ন জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন দিয়েছেন, জেল খেটেছেন, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কলকাতা সিটি কলেজের ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রভাষক এবং ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিলের সদস্য শ্রী শান্তিময় রায়কে এক প্রবীণ নেতা বলেছিলেন  "স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা ছিল বৈরী।" এই ঘটনা শ্রী শান্তিময় রায়কে বিচলিত করে। তাই তিনি "ভারতের মুক্তি সংগ্রাম ও মুসলিম অবদান" নামে গবেষণামূলক গ্রন্থ  রচনা করেন। সেখানে উঠে আসে - সব বীরত্বের কথা যা চেপে রাখা হয়েছিল এবং এখনও হচ্ছে।

দু'জন অন্তরঙ্গ বন্ধু বাবা রআমচরণ দাস ও মৌলবী আমীর আলী
ইতিহাসে সম্প্রীতি: পর্ব-৩

হিন্দু-মুসলমানের এক মিলিত জাতীয় বিদ্রোহ (National revolt of Hindus and Muslims)

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিপ্লব এই উপমহাদেশের এমন এক ইংরেজদের গণবিস্ফোরণ যার নজির পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া কঠিন। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের দীর্ঘ একশো বছরের শাসন শোষণ এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনাচারের বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বশ্রেণীর শান্তিপ্রিয় মানুষ এক সাথে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন।

১৮৫৭ সালের ঘটনা যে শুধু সিপাহিদেরই বিদ্রোহ নয়, সেটি যে এ-দেশের ব্যাপক ভূখণ্ড জুড়ে “হিন্দু-মুসলমানের এক মিলিত জাতীয় বিদ্রোহ' (National revolt of Hindus and Muslims ) – এ কথাটি ওই অভ্যুত্থানের সময়েই মার্কস তাঁর "প্রথম ভারতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ ১৮৫৭ - ৫৯" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। আর এই মিলনের বার্তা ছড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতার পথে পথে।

আজকের এই পর্ব থেকে জানতে পারবো নীচের যে ছবিটি আমরা দেখছি এরা হলেন ফৈজাবাদ বিদ্রোহের নেতা হনুমানগড়ির মহন্ত বাবা রাম চরণ দাস ও মৌলভী আমির আলী। তাঁরা ছিলেন একে অপরের দীর্ঘ দিনের অন্তরঙ্গ বন্ধু । এরা ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে কাঁধে কাঁধ হাতে হাত রেখে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছেন। অবশেষে ব্রিটিশরা এই দুই জন মহান নেতাকে ১৮ ই মার্চ ১৮৫৮ সালে একটি দড়িতে গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় (অতএব দড়ি একটি ফাঁসিতে দুই জন)। যে জায়গায় এটা ঘটেছিল সেখানে এই বিপ্লবীদের শ্রদ্ধার্থে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে এটি অযোধ্যায় অবস্থিত।(তথ্য: পশ্চিমঙ্গ বাংলা আকাদেমি কর্তৃক প্রকাশিত "মুক্তি সংগ্রামে ভারত" দ্বিতীয় সংস্করণ, ডিসেম্বর ২০১০, Unity mounts at Kuber Teela: Times of India, August 20, 2017. গুগল)।

এই ধরনের সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত ভারতের এক মহৎ ইতিহাস গড়ে উঠেছে। যা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. চির কৃতজ্ঞ থাকলাম স্যার জি।

    উত্তরমুছুন
  2. স্যার জি এটা একটি সিরিজ পর্ব । যেহেতু ধারাবাহিক ভাবে বের হচ্ছে। তাই পর্ব নম্বর দিয়ে শেয়ার করবেন। ভালোবাসা অবিরাম.....

    উত্তরমুছুন