দীর্ঘ সাংগঠনিক জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা হল- আমাদের বাংলায় মুসলিম সমাজের মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশের মতো মানুষ ছলাত বা নামাজ আদায় করেন। যারা নামাজ আদায় করেন তাদের মধ্যে শতাংশের বিচারে ৩-৪ শতাংশ মানুষ ফরজ গোসল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বাদবাকি ৯৬ শতাংশ মুসল্লির ফরজ গোসল সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নেই। অথচ এমন মুসল্লীও আছেন যারা ৩০-৪০ বছর ধরে নামাজ আদায় করেন। যারা ফরজ গোসল সম্পর্কে কিছুটা জানেন, তাদের মধ্যে ৩ শতাংশ মানুষও এমন নেই যে নামাজের হুকুম-আহকাম গুলো ভালোভাবে জানেন। যারা হুকুম আহকাম গুলো একটু-আধটু জানেন, তাদের মধ্যে সুরা ফাতেহার অর্থ জানেন এমন মানুষের সংখ্যা দুই থেকে তিন শতাংশ; অথচ দিনে কমপক্ষে ১৭ বার, ঊর্ধ্বে অনেকবার এই সূরাটি পাঠ করতেই হয়। বাংলা জুড়ে সমীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতিদিন যারা মসজিদে ছলাত আদায় করতে আসেন, তাঁদেরকে যদি সূরা ফাতিহা থেকে নিয়ে নামাজের প্রয়োজনীয় দোয়া দরুদ শেখানোর কথা ঘোষণা করা হয়, তাহলে মসজিদ থেকে বহু মুসল্লি পালিয়ে যাবেন বলে জনমত সমীক্ষা ধরা পড়েছে। এমনিভাবে মুসলিম সমাজের দৈনদশা নিয়ে পর্যালোচনা করলে রোজনামচার প্রহর অ-নে-ক বড় হবে। মুসল্লিদের মধ্যে অধিকাংশই আবার অশিক্ষিত অথবা অর্ধশিক্ষিত। যারা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তারা আবার কিয়দংশ ছলাত আদায় করলেও সহজে মসজিদে যেতে চাননা। ব্যক্তি যদি রাজনীতিবিদ হন, তাহলে তিনি ছলাত আদায় করা এবং মসজিদে যাওয়া চরম অপমাননাকর বিষয় বলে মনে করেন। তাঁদের হাবভাব, চালচলনে প্রকাশ পায়- "আমরা তো শুধু মুসলিম নই, আমরা আরও অনেক কিছুই"। সে জন্য দেখতে পাই, এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদরা পূজাও করেন, আবার কেতাদুরস্ত পোশাক পরিধান করে বছরে দুইবার ঈদগাহের ময়দানে প্রথম সারিতেও বসেন। সত্যিই এ জাতির জন্য এটা একটা লজ্জাস্কর বিষয়। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এমন ব্যক্তিও পাওয়া যায়, যারা লোক লজ্জার ভয়ে শুধুমাত্র শুক্রবারের সাপ্তাহিক মুসল্লি হন। তাঁরা তো আবার আরবি জানেন না, তাই আরবি নিয়ে তাঁদের খুব বেশি ছুৎমার্গ থাকে না; থাকে ইমাম নিয়ে, আর ইসলাম নিয়ে। কারণ, যারা ইমাম থাকেন তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিকে মনের খোরাক দিতে অসামার্থ হন। তদুপরি তাঁদের ভাষা এত নিম্নমানের যা অকল্পনীয়। যা শুনে শিক্ষিত মানুষদের বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়। সাধারণত তখন তাদের ধারণা জন্মে ইমাম মানে অযোগ্য, নতুবা ইসলাম এমনই। ফলে ইসলামের স্বচ্ছ ধারণা থেকে ঐ শিক্ষিত ব্যক্তি বঞ্চিত হয়ে পড়েন, ফলে তাঁর কাছে ইসলাম হয়ে যায় প্রশ্নবিদ্ধ। সে জন্যই তো দেখতে পাই, ইমাম সমাজকে পরিচালনা করার পরিবর্তে, ইসলামের জ্ঞান না থাকা ব্যক্তিরাই ইমামকে পরিচালনা করেন। আবার যদি কেউ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইসলামটাকে জেনে বুঝে দাওয়াতি ময়দানে হাজির হন, তাহলে আবার তথাকথিত আলেম সমাজ তাঁর বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন। তাঁদের একটাই অভিযোগ, সাধারণ শিক্ষিত মানুষ আরবি শুদ্ধভাবে পড়তে পারেনা। এটা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আলেম সমাজ নিজের ভাষাটাও শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে না পারাটা অপরাধটা নয় কি! এমন আলেমও দেখেছি যিনি বজ্রপাতকে বীর্যপাত বলে বক্তব্য পেশ করছেন। এ ফিরিস্তি অ-নে-ক লম্বা। এ সমস্ত বহুবিধ কারণে আরবি জানা ব্যক্তিদের সাথে আধুনিক জ্ঞান থাকা ব্যক্তিদের মাঝে মনের অজান্তেই একটি অদৃশ্য প্রাচীর গড়ে ওঠে। তাই নয় কী?
0 মন্তব্যসমূহ